
কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা: পেঁয়াজ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী একটি খাবার। কারণ কাঁচা পেঁয়াজে উপস্থিত পুষ্টি ও ফাইটোকেমিক্যাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
তাই আজকের পোস্টে আমরা কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এখন অন্য কোন কথা না বলে শুরু করি ৷
কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা
- চুল বৃদ্ধি করে এবং খুশকি দূর করে।
- রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।
- হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
- সংক্রমণ নিরাময় করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- যৌন শক্তি বাড়ায়।
- ত্বক উজ্জ্বল করে।
- ব্রণ কমায়।
- রক্তপাত কমে যায়।
- প্রস্রাবের জ্বালা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- সর্দি-কাশি নিরাময় করে।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে।
১) চুল বৃদ্ধি করে এবং খুশকি দূর করে
মাথার ভালো চুল আপনাকে অনেক সুন্দর দেখায় । এছাড়া বিশেষ করে আমাদের অনেকেরই চুলে খুশকি হয় । ফলে মাথা নোংরা হয়ে যায় । এই সমস্যা সারাতে কাঁচা পেঁয়াজ খুবই কার্যকরী । এমনকি পেঁয়াজ আমাদের চুল বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এ জন্য প্রথমে কাঁচা পেঁয়াজ থেকে রস বের করে মাথায় ম্যাসাজ করুন । প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার পেঁয়াজের রস মালিশ করলে চুল গজাবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে খুশকি দূর হবে ।
২) রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে
পেঁয়াজ রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । কারণ কাঁচা পেঁয়াজের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের রক্ত পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে । এছাড়াও প্রতিদিন কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী । এছাড়া পেঁয়াজ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে । এ জন্য খাবারের সময় সালাদ হিসেবে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন ।
৩) হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
আমাদের অনেকেরই হজমশক্তি খারাপ । বিশেষ করে বয়স্কদের বেশিরভাগেরই হজমশক্তি খারাপ থাকে । তবে যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা যদি প্রতিদিন এক থেকে দুটি কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন, তাহলে আশা করা যায় তাদের হজম শক্তি বাড়বে । কারণ পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম বাড়াতে সক্ষম । ফলে খাবার খাওয়ার পর খুব দ্রুত খাবার হজম হয় ।
৪) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাচাঁ পেঁয়াজ পুষ্টিগুণে ভরপুর । ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । পেঁয়াজে থাকা ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, মিনারেল, সালফার, কার্মিনেটিভ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক ইত্যাদি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে পারে । বিশেষ করে অ্যালার্জি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে ।
৫) দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
দাঁতের ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । এমনকি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ সেবন করি । তারপরও দেখা যাচ্ছে দাঁতের সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না । কিন্তু আপনি জানেন কি আপনার দাঁতের ইনফেকশন চিরতরে দূর করতে কাঁচা পেঁয়াজ খুবই কার্যকরী । কারণ কাঁচা পেঁয়াজের রস আমাদের দাঁতের সমস্ত জীবাণু ধ্বংস করে । ফলে দাঁতের ইনফেকশন খুব দ্রুত সেরে যায় । তাই প্রতিদিন ঘরে থাকা কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে দাঁতের সংক্রমণ এড়াতে পারেন ।
৬) সংক্রমণ নিরাময় করে
কাচাঁ পেঁয়াজ যে পুষ্টিগুণে ভরপুর তা আমরা আগেই জেনেছি । যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, কারমিনেটিভ, অ্যান্টিসেপ্টিক ইত্যাদি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এছাড়া কাঁচা পেঁয়াজের রস বের করে তাতে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি, কাশি ও শরীরের ব্যথা কমে যাবে ।
৭) ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমানোর জন্য আমরা জিমে গিয়ে বিভিন্ন ব্যায়াম করি । এছাড়া আমরা নিয়মিত খেলাধুলা করি । এমনকি খাবারের তালিকাও পরিবর্তন করি । খাদ্য তালিকা থেকে চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে থাকি । তারপরও দেখা যায় অনেকের ওজন কমে না । ওজন কমানোর অন্যতম সেরা ঘরোয়া উপায় হল কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া । কারণ কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে ফাইবার এবং কোয়ারসেটিন । যা ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
৮) যৌন শক্তি বাড়ায়
কাঁচা পেঁয়াজের রস টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । ফলে পেঁয়াজ আমাদের যৌন শক্তি বাড়াতে পারে । আমাদের মধ্যে যাদের যৌন শক্তি দুর্বল তাদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ খুবই উপকারী । কারণ পেঁয়াজ আমাদের যৌন ক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে দেয় । এজন্য প্রথমে কাঁচা পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিন । এর পর পেঁয়াজ কাটা মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খান । দেখুন এক সপ্তাহে আপনার যৌন শক্তি কতটা বেড়ে যায় ।
৯) ত্বক উজ্জ্বল করে
বিশেষ করে যারা মাঠে কাজ করেন বা কৃষিকাজ করেন তারা তাদের ত্বকের যত্ন নিতে পারেন না । তাদের সর্বদা রোদে এবং ধুলায় থাকতে হয় । এই সকল মানুষের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া খুবই উপকারী । কারণ কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে । তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আপনার রান্নাঘরে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন ।
১০) ব্রণ কমায়
বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণের সমস্যা বেশি দেখা যায় । ব্রণ দূর করতে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিই । এমনকি আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাই । তারপরও ব্রণ কমে না । কিন্তু আপনি কি জানেন যে ব্রণ থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম ঘরোয়া উপায় হল কাঁচা পেঁয়াজ? কাঁচা পেঁয়াজ থেকে রস বের করে আমন্ড অয়েল সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করলে তিন দিনের মধ্যে ব্রণ কমে যাবে ।
১১) রক্তপাত কমে যায়
যখন আপনি একটি ছুরি দিয়ে একটি কাঁচা পেঁয়াজ কাটবেন । তখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে পেঁয়াজ থেকে একধরনের ঝাঝ আসে এবং চোখে আঘাত করে । ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে । পেঁয়াজের এই ঝাঝ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে । ফলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় । এছাড়া কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বায়ো-ফ্ল্যাভোনয়েড ।
Read More:
- পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা – ২০২৩
- ঢাকার সেরা ১৫ জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তালিকা
- দুধ খাওয়ার সেরা ১৭টি উপকারিতা
ফলস্বরূপ, এটি আমাদের কৈশিকগুলিকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । আপনার রক্তপাত কমাতে প্রথমে একটি কাঁচা পেঁয়াজ দুই টুকরো করে কেটে নিন । এরপর কাটা পেঁয়াজ কিছুক্ষণ শ্বাস নিতে থাকুন । দেখবেন খুব দ্রুত রক্তপাত কমে যাবে ।
১২) প্রস্রাবের জ্বালা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
প্রস্রাবের যেকোনো সমস্যার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত পানি পান না করা । এছাড়াও ভিটামিনের অভাব, পুষ্টির অভাব প্রস্রাবে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে । কিন্তু প্রতিদিন যদি নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন তাহলে প্রস্রাবের যেকোনো সমস্যা চলে যাবে । মূত্রনালীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । আপনি চাইলে পেঁয়াজ ভাতের সাথে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন ।
১৩) সর্দি-কাশি নিরাময় করে
কাঁচা পেঁয়াজ সর্দি-কাশি সারাতে পারে । কারণ পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা সর্দি-কাশি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এজন্য প্রথমে কাঁচা পেঁয়াজ কুচি করে একটি পাত্রে পানি দিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা রেখে দিন । কিছু মধু যোগ করুন । প্রতিদিন নিয়মিত এই পেঁয়াজের পানি পান করুন । এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি নিজেই এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন ।
১৪) ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ খুবই উপকারী । কারণ পেঁয়াজ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । পেঁয়াজে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ডায়াবেটিস কমাতে পারে । এছাড়াও, যাদের প্রি-ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের প্রতিদিন একটি বা দুটি পেঁয়াজ খাওয়া উচিত । ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাবে।
১৫) ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম । বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার নিরাময়ের অন্যতম ওষুধ । তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চাইলে প্রতিদিন নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে পারেন ।
পরিশেষে
বন্ধুরা, কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি আপনাদের ততটুকু জানানোর চেষ্টা করেছি । তারপরেও যদি কিছু জানার বাকি থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । আমরা আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, ধন্যবাদ ।
Leave a Reply