
আনারস খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা – ২০২৩: আনারস একটি সুস্বাদু ফল। বাংলাদেশের মানুষ আনারস খেতে ভালোবাসে। আনারস পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আজকের পোস্টে আমরা আনারস খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক উপকারিতাগুলো।
আনারসের পুষ্টিগুণ
আনারস পুষ্টিগুণে ভরপুর । বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আনারসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ।
ভিটামিন বি-৬, থায়ামিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ফোলেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি ।
আনারস খাওয়ার উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ক্যান্সার নিরাময় করে
- ত্বক উজ্জ্বল করে
- দাঁত ও মাড়ির ব্যথা উপশম করে
- দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
- ওজন কমায়
- সর্দি-কাশি দূর করে
- হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
- হাড় মজবুত করে
- শরীরের ফোলাভাব কমায়
- শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করে
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- বদহজম দূর করে
- হাঁপানি উপশম করে
- ব্রণ ও দাগ দূর করে
- কৃমি দমন করে
- উর্বরতা বাড়ায়
১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমাদের শরীরের ভাল ইমিউন সিস্টেম থাকতে হবে । কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে বিভিন্ন রোগ সহজেই শরীরে প্রবেশ করে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন একটি খাবার হলো আনারস । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং প্রোটিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
২) ক্যান্সার নিরাময় করে
ক্যান্সার একটি নীরব ঘাতক রোগ । যা আমাদের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে । ক্যান্সার সারাতে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিই । কিন্তু আপনি কি জানেন যে আনারস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । কারণ আনারস খাওয়ার ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে । ফলে এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে । এছাড়াও আনারসের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মানবদেহের ফ্রি র্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে সাহায্য করে । ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় ।
৩) ত্বক উজ্জ্বল করে
আমাদের সকলেরই ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত । কারণ সুন্দর নয় এমন ত্বক কেউ পছন্দ করে না । ত্বক উজ্জ্বল করতে আনারস খুবই কার্যকরী । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারে । যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্যও আনারস খুবই উপকারী । আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত আনারস খেতে পারেন তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার ব্রণ চিরতরে দূর হয়ে যাবে ।
৪) দাঁত ও মাড়ির ব্যথা উপশম করে
দাঁতের সমস্যা খুবই জটিল একটি সমস্যা । যা আমাদের উঠতে বসতে সবসময় কষ্ট দেয় । কিন্তু আনারস দাঁত ও মাড়ির যেকোনো সমস্যা সারাতে পারে । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দাঁতের যেকোনো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । তাই দাঁত সুস্থ রাখতে বেশি করে আনারস খান ।
৫) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
আপনি কি জানেন যে দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হল বেশি করে আনারস খাওয়া । গবেষকদের মতে, আনারসে উপস্থিত ক্যারোটিন চোখের যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে । তাই চোখ সুস্থ রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত একটি আনারস খেতে পারেন ।
৬) ওজন কমায়
ওজন কমানোর জন্য আমরা অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করি । তারপরও দেখা যায় অনেকের ওজন কমে না । আনারস খাওয়া তাদের জন্য খুবই উপকারী । কারণ আনারস ওজন কমাতে সাহায্য করে । আনারসে থাকা ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে । এর জন্য আপনাকে আনারস কেটে রস বেক করতে হবে । ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যাবে ।
৭) সর্দি-কাশি দূর করে
সর্দি-কাশি একটি কঠিন এবং জটিল সমস্যা । যখন এই রোগ হয়, তখন আমাদের গলা ব্যথা হয় । এমনকি গলার অসুখও হতে পারে নানা সমস্যা । আনারস চিরতরে সর্দি-কাশি সারাতে পারে । কারণ আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে ফলে সি সর্দি-কাশির ঝুঁকি কমাতে পারে ।
৮) হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
আমরা অনেকেই জানি না যে আনারস হজমশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে । কারণ আনারসে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং এনজাইম যা হজমশক্তির উন্নতির অন্যতম ওষুধ । এছাড়াও যাদের বদহজম আছে তাদের প্রতিদিন একটি করে আনারস খাওয়া উচিত । কারণ আনারস বদহজম দূর করতে পারে ।
৯) হাড় মজবুত করে
আমাদের অনেকেরই হাড়ের সমস্যা আছে । আনারস এই রোগের অন্যতম ঘরোয়া প্রতিকার । হাড়ের সমস্যার প্রধান কারণ শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব । আনারস ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে । তাই হাড়ের যেকোনো সমস্যা সারাতে আনারস খাওয়া শুরু করুন ।
১০) শরীরের ফোলাভাব কমায়
আমরা শরীরের ফোলা কমানোর চিন্তা করি । অনেকে ব্যায়াম করেন, আবার অনেকে খাদ্য পরিবর্তন করেন । তারপরও দেখা যায় শরীরের ফোলাভাব কমে না । কিন্তু আপনি কি জানেন যে আনারস শরীরের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে? কারণ আনারসে রয়েছে পটাশিয়াম ও আয়রন যা শরীরের ফোলাভাব কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
১১) শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করে
আমাদের শরীরে পুষ্টির অভাব হলে যেকোনো রোগ সহজেই আক্রমণ করতে পারে । তাই আমাদের শরীরে বেশি করে পুষ্টি উপাদান থাকার চেষ্টা করতে হবে । আনারস পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি, যা শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সক্ষম ।
১২) ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
ডায়াবেটিস একটি গুরুতর সমস্যা যা শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে । বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হন । ডায়াবেটিস শরীরে থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূর করার চেষ্টা করুন । আনারস ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দিতে পারে । কারণ আনারসে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে পারে ।
অন্য পোস্ট : টমেটো খাওয়ার ২০টি উপকারিতা – ২০২৩
১৩) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
উচ্চ রক্তচাপ একটি খুব খারাপ সমস্যা । এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে যাই । ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ সেবন করি । কিন্তু আপনি জানেন কি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনারসই যথেষ্ট । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ফাইবার যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ।
১৪) বদহজম দূর করে
বদহজম আমাদের জন্য খাবার খাওয়া কঠিন করে তোলে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বদহজম থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । আনারসে থাকা প্রোটিন বদহজম দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এটি হজমশক্তি উন্নত করতেও সাহায্য করে । তাই বেশি করে আনারস খাওয়ার চেষ্টা করুন ।
১৫) হাঁপানি উপশম করে
হাঁপানি একটি খুব কঠিন রোগ । যার হাঁপানি আছে সে জানে এটা কতটা জ্বালাযন্ত্রণা । হাঁপানির অন্যতম কারণ নোংরা পরিবেশে থাকা । সেজন্য আমাদের সবাইকে ভালো পরিবেশে থাকতে হবে । আনারস এই মারাত্মক হাঁপানি দূর করতে সক্ষম । এর জন্য আপনাকে আনারস থেকে রস বের করে প্রতিদিন এক থেকে দুই চা চামচ খেতে হবে । আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার হাঁপানি কয়েক দিনের মধ্যে চলে গেছে ।
১৬) ব্রণ ও দাগ দূর করে
ত্বকে ব্রণ ও দাগ দেখতে ভালো লাগে না । এই ব্রণ এবং দাগ থেকে মুক্তি পেতে আমরা বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করি । কিন্তু দেখা যায় ব্রণ ও দাগ দূর হয় না । এই ব্রণ ও দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হল বেশি করে আনারস খাওয়া । কারণ আনারসে থাকা ভিটামিন সি ব্রণ ও দাগ দূর করতে যথেষ্ট । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আনারস খেতে হবে ।
১৭) কৃমি দমন করে
কৃমি আমাদের পেটে খোঁচা দেয় এবং জন্মায়। ফলে অনেক সময় ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে । এই কৃমি দূর করার একটি খাবার হল আনারস । সেজন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটি আনারস কেটে রস খেতে হবে । ফলে পায়খানার সঙ্গে কৃমি বেরিয়ে আসবে । তাই কৃমি থেকে মুক্তি পেতে হলে আজ থেকেই ব্যবহার করুন এই পদ্ধতি ।
১৮) উর্বরতা বাড়ায়
আপনি যদি সন্তান নিতে চান তাহলে খাবারের তালিকায় আনারস যোগ করুন । কারণ আনারসে আছে ভিটামিন, জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন, ফোলেট ইত্যাদি যা উর্বরতা বাড়াতে সক্ষম । তাই প্রতিদিন এক থেকে দুটি আনারস খাওয়ার চেষ্টা করুন । আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আপনার উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে ।
আনারস ও দুধ খেলে কি হয়?
আমরা অনেকের কাছে শুনেছি আনারস দুধে মিশিয়ে খেলে নাকি মানুষ মারা যায় । গবেষকদের মতে এটি সম্পূর্ণ ভুল, আনারসের সাথে দুধ মিশিয়ে দিলে দুধ দই বা দই হয়ে যায় । ফলে আনারস ও দুধ মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হতে পারে । কিন্তু আনারস আর দুধ মিশিয়ে মানুষ কখনো মরবে না ।
গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়?
চিকিত্সকরা গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন । কারণ আনারসে আছে ব্রোমেলেন নামক এনজাইম উপাদান, যার ফলে আনারস খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়াও গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা হতে পারে । যার কারণে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের আনারস খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা ।
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়?
বিভিন্ন অসুখ সারাতে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে আনারস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এছাড়া খালি পেটে আনারস খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী । তাই আজ থেকেই খালি পেটে আনারস খাওয়া শুরু করুন ।
পরিশেষে
বন্ধুরা, আমরা আপনাকে আনারস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি । আশা করি আপনি বিস্তারিত জানতে পেয়েছেন । বন্ধুরা, কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করুন । আমরা আপনার মূল্যবান প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ধন্যবাদ ।
Leave a Reply